হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পবিত্র বানু করামত, হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.)-এর কোমে আগমনের (২৩ রবিউল আউয়াল) বার্ষিকীকে উপলক্ষ করে, যা “কোম দিবস” নামে পঞ্জিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, এটি এমন একটি মূল্যবান সুযোগ যা আমাদের আবারো এ শহরের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের কারণগুলো বিবেচনা করতে সহায়তা করে এবং পাশাপাশি এমন উপায় খুঁজে বের করার প্রেরণা জোগায় যাতে কোমের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক স্থান সর্বদা সংরক্ষিত থাকে।
একইসাথে লক্ষ্যণীয় যে, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, জিয়ারত এবং এমনকি অর্থনৈতিক দিক থেকেও এ শহরের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যেগুলো দুর্ভাগ্যবশত মাঝে মাঝে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এমনকি জনগণের কাছ থেকেও উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ “কোম দিবস” হলো একটি সুযোগ, যেখান থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব সক্ষমতা যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব।
শিয়া বিশ্বে কোমের বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক স্থান
হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ মাহমুদ মুসাভি হাসাব, একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও হাওযা গবেষক, ক্বোমের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং তার সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন:
হযরত মাসুমা (সা.)-এর কোমে আগমন আমাদের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ঘটনা। তিনি শুধু একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা প্রায়-ইমামতুল্য মর্যাদাসম্পন্নই নন, বরং তাঁর আগমনের বরকতে কোমের সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সমাজ জীবনে গভীর প্রভাব পড়েছে এবং সমগ্র ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র উপকৃত হয়েছে। তাই ২৩ রবিউল আউয়ালকে “কোম দিবস” হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে, যা এই ঘটনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি এ শহরের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে।
তিনি আরও বলেন: কোম শুধু জিয়ারতের কেন্দ্র নয়, বরং বিশ্ব শিয়াবাদের মারজিয়াত ও ফিকাহতের কেন্দ্র। পাশাপাশি ইসলামী বিপ্লবের বিজয় ও স্থায়িত্ব এবং জাতীয়-ধর্মীয় বহু ঘটনার ক্ষেত্রে এর ভূমিকাও অস্বীকারযোগ্য।
শিল্প ও গণমাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার জরুরি
এই সাংস্কৃতিক কর্মী ও গবেষক জোর দিয়ে বলেন, গণমাধ্যম, শিল্প ও প্রচারণার আকর্ষণীয় মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে কোমের বিশেষ স্থান ও সামর্থ্যকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন: ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দিক ছাড়াও, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কোম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি দেশের ১৭টিরও বেশি প্রদেশকে সংযুক্তকারী যোগাযোগের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং রাজধানীর নিকটবর্তী হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক বিকাশে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন: কোম, মাশহাদের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জিয়ারত কেন্দ্র এবং মাহদাভিয়াতের (ইমাম মাহদী (আ.) বিষয়ক শিক্ষা ও আন্দোলন) প্রধান কেন্দ্র। তাই “ক্বোম দিবস”-এ এই সব সামর্থ্যকে আরও বিকশিত করার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
এ গবেষক আরও যোগ করেন: কোমের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিকগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা “কোম দিবস”-এ বিশেষভাবে প্রদর্শন করা যেতে পারে।
সভ্যতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈজ্ঞানিক মর্যাদা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা
ড. সাইয়্যেদা ফাতিমা সাইয়্যেদ মাদ্দাল্লেল কার, হাওযার নারী শিক্ষিকা, বলেন: কোমের প্রতি সভ্যতামূলক, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় বজায় রাখতে হবে। ইসলামী নবজাগরণমূলক সভ্যতা গঠনে ক্বোমের বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন: নতুন ইসলামী সভ্যতা গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হলে হাওযা ও বিশ্ববিদ্যালয় উভয় দিক থেকেই কোমের বৈজ্ঞানিক মর্যাদার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
সাংস্কৃতিক উন্নয়নে হাওযা ও আলেম সমাজের মূল ভূমিকা
নারী শিক্ষিকা আরও বলেন: “কোম দিবস”-এ হাওযা ও আলেম সমাজের বিশেষ ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একইসাথে জনগণের ঐতিহাসিক ভূমিকা সম্পর্কেও মনোযোগী হতে হবে।
তিনি যোগ করেন: আল-মুস্তাফা (সা.) ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জামে আত-যাহরা (সা.) এবং তাদের স্নাতকরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশাল ভূমিকা রাখতে সক্ষম। পাশাপাশি বহু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও কোমকে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.)-এর পবিত্র রওজা; কোমে ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু
তিনি বলেন: আহলে বাইতের (আ.) কারিমা হযরত মাসুমা (সা.)-এর পবিত্র রওজা এ শহরের ঐক্য ও সংহতির আলোকবর্তিকা। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এখানে সমবেত হয়। তাই “কোম দিবস” কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণ নয়; বরং এটি এমন এক অনুষ্ঠান যা শহরের সামাজিক সংহতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে আরও দৃঢ় করে।
নারী শিক্ষিকা আরও জোর দিয়ে বলেন: নিঃসন্দেহে, হযরত মাসুমা (সা.)-এর উপস্থিতি ছাড়া কোম কখনো বর্তমান মর্যাদা অর্জন করতে পারত না। তাঁর বরকতে কোম আলেম, মুহাদ্দিস ও শিয়াদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ শহরের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মর্যাদা যেন সর্বদা বাসিন্দা, প্রতিবেশী এবং জিয়ারতকারীরা রক্ষা ও সংরক্ষণ করেন।
আপনার কমেন্ট